সুকন্যা সমৃদ্ধি যোজনা | Sukonya samriddhi jojona | Sukanya Samriddhi Yojana in Bengali

সুকন্যা সমৃদ্ধি যোজনা  Sukonya Samriddhi Jojona  Sukanya Samriddhi Yojana in Bengali

আপনি যদি কন্যা সন্তানের পিতা হয়ে থাকেন তবে কেন্দ্র সরকারের সুকন্যা সমৃদ্ধি যোজনার লাভ নিতে পারেন। মেয়েদের শিক্ষার পথকে সুগম করতে কেন্দ্র সরকারের নেওয়া এই পদক্ষেপ ভারতের মেয়েদের ভবিষ্যতের জন্য লাভদায়ক তো বটেই, পাশাপাশি আপনার মনের চিন্তাও অনেকক্ষেত্রেই দূর করতে সক্ষম। কন্যার শিক্ষা ছাড়াও তার বিয়ের সময়েও আপনকে টাকা নিয়ে ভাবতে হবে না। আপনি নিজেও জানতে পারবেন না, আপনার সল্প সঞ্চয় কিভাবে আপনার কন্যা সন্তানের ভবিষ্যত সুরক্ষিত করেছে।

ভারতের কোনও মেয়ে যাতে পিছিয়ে না থাকে সেই কারণেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী  সুকন্যা সমৃদ্ধি যোজনা চালু করার কথা ভেবেছেন। মূলত ‘বেটি বাঁচাও বেটি পড়াও’ যোজনারই অংশ এই সুকন্যা সমৃদ্ধি যোজনা। এই যোজনায় মূলত সুদ ও ট্যাক্স সম্পর্কিত লাভ প্রদান করা হবে। বিগত ২০১৪ সালের ২ ডিসেম্বর এই যোজনা প্রস্তাবিত হয়। সে বছরের বাজেট পেশ করার সময় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি এই যোজনার কথা ঘোষণা করেন। এরপর ২০১৫ সালের ২২ জানুয়ারি এটি চালু করা হয়। ভারতের মত দেশে বেশিরভাগ বাবা মায়েরাই তাদের কন্যা সন্তানদের অবহেলার চোখেই দেখেন। তারা কন্যা সন্তানাদের শিক্ষা কথা তো দূর ভবিষ্যত সুরক্ষিত করার কথাও সেভাবে ভাবেন না। সেকারণেই বাবা মায়েরা যাতে তার কন্যা সন্তানের শিক্ষা ও ভবিষ্যতের কথা ভাবেন তাই কেন্দ্রীয় সরকার মাতা পিতাদের তাদের মেয়েদের জন্য সঞ্চয় করার জন্য উৎসাহ প্রদান করার জন্য এই যোজনা চালু করেছে।

কন্যার জন্ম থেকে ১০ বছর বয়সের মধ্যে সুকন্যা সমৃদ্ধি অ্যাকাউন্ট খোলা যেতে পারে। কারণ কন্যার ১০ বছর বয়স পর্যন্তই তার পিতা মাতা অথবা আইনী অভিভাবক ওই অ্যাকাউন্ট দেখা শোনা করতে পারবেন। কন্যার ১০ বছর বয়সের পর থেকে তাকেই ওই অ্যাকাউন্টের জবাবদিহি করতে হবে।

সুকন্যা সমৃদ্ধি অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য প্রয়োজনীয় নথিঃ

  • সুকন্যা সমৃদ্ধি অ্যাকাউন্ট খোলার ফর্ম
  • কন্যার জন্ম প্রমাণপত্র
  • পিতা মাতা বা আইনী অভিভাবকের পরিচয় পত্র (আধার কার্ড, ভোটার কার্ড, প্যান কার্ড, রেশন কার্ড, পাসপোর্ট, ড্রাইভিং লাইসেন্স)
  • পিতা মাতা বা আইনী অভিভাবকেরা ঠিকানা প্রমাণ পত্র (পাসপোর্ট, রেশন কার্ড, ইলেক্ট্রিক বিল, টেলিফোন বিল, ড্রাইভিং লাইসেন্স)

সুকন্যা সমৃদ্ধি অ্যাকাউন্ট খোলার নিয়মঃ

  • মাতা পিতা বা আইনী অভিভাবক সর্বাধিক দুটি মেয়ের জন্য সুকন্যা সমৃদ্ধি অ্যাকাউন্ট খুলতে পারবেন। কোনো কারণে যদি কারও যমজ অথবা তিনটি কন্যা একসঙ্গে জন্মগ্রহণ করে থাকে সেক্ষেত্রে হাসপাতালের প্রমাণপত্র জমা দিলে তাদের এই যোজনার অন্তর্গত করা যেতে পারে। এছাড়াও কোনও ব্যক্তি তার দত্তক কন্যার জন্যেও সুকন্যা সমৃদ্ধি যোজনা অ্যাকাউন্ট খুলতে পারবেন।
  • কন্যার জন্মের ১০ বছরের মধ্যে এই অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে। প্রাথমিক সুবিধার করা মাথায় রেখে অন্তবর্তী সময়কাল হিসেবে ১ বছরের ছাড় দেওয়া হয়েছে। অর্থাত কোনও কন্যার জন্ম ২ ডিসেম্বর ২০১৩ থেকে ১ ডিসেম্বর ২০০৪ সালের মধ্যে হলে তার নামের অ্যাকাউন্ট ২০১৫ সালের মধ্যে খোলা যেতে পারে।
  • সুকন্যা যোজনার অন্তর্গত কেবল কন্যার নামেই অ্যাকাউন্ট খোলা যাবে। একটি কন্যার নামে কেবল একটিই অ্যাকাউন্ট খোলা সম্ভব ।এই অ্যাকাউন্টে টাকা জমা কেবল এক জন অভিভাবকই দিতে পারবেন। যিনি তার নাবালিকা মেয়ের হয়ে তার ভবিষ্যত সুরক্ষিত করার লক্ষ্যে অ্যাকাউন্টে টাকা জমা করবেন।
  • এই যোজনা প্রাথমিক ভাবে কেবল মাত্র পোস্ট অফিসেই খোলা যেত{ তবে বর্তমানে সুকন্যা সমৃদ্ধি অ্যাকাউন্ট পোস্ট অফিস ছাড়াও অধিকৃত ব্যাঙ্কে খোলা যাবে। ব্যাঙ্কগুলি হলঃ ভারতীয় স্টেট ব্যাঙ্ক, ব্যাঙ্ক অফ বরোদা, পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্ক, কানাড়া ব্যাঙ্ক, অন্ধ্র ব্যাঙ্ক, ইউসিও ব্যাঙ্ক ও এলাহাবাদ ব্যাঙ্ক।

সুকন্যা সমৃদ্ধি যোজনা অ্যাকাউন্টের সুবিধা-

  • প্রয়োজন মত এই অ্যাকাউন্ট সরিয়ে নেওয়া যাবে। অর্থাৎ কোনও ভাবে যদি অ্যাকাউন্টধারী মেয়েটির শহর বা রাজ্য পরিবর্তন হয় সেই মত অ্যাকাউন্ট অন্য শহর বা রাজ্যের ব্রাঞ্চে বদলি করে নেওয়া যাবে।
  • পরিস্থিতির ভিত্তিতে অ্যাকাউন্ট বন্ধ বা টাকা তোলা যেতে পারে। যেমন যদি অ্যাকাউন্টধারী মেয়েটির মৃত্যু অথবা প্রাণঘাতী কোনও রোগ হয় সেক্ষেত্রে এই অ্যাকাউন্ট বন্ধ করার যেতে পারে বা অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তোলা যেতে পারে। যদিও এক্ষেত্রে অবশ্যই উপযুক্ত প্রমাণ দেখাতে হবে।
  • অ্যাকাউন্ট থেকে জমা রাশির ৫০ শতাংশ ধার হিসেবে নেওয়া যেতে পারে। যদিও তা শুধু মাত্র কন্যার উচ্চশিক্ষা অথবা বিয়ে সম্বন্ধিত কারণ হতে হবে। কন্যা সম্পর্কিত কারণ ছাড়া অন্য কোনও কারনে টাকা তোলা যাবে না।
  • যদি কন্যার বিয়ে ১৮ থেকে ২১ বছরের মধ্যে করা হয় তবে অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দিতে হবে। অর্থাৎ কন্যার বিয়ের পর এই অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দিতে হবে। যদি কোনও কারণে অ্যাকাউন্ট বন্ধ না করা হয তবে যতদিন না পর্যন্ত অ্যাকাউন্ট পরিণত হচ্ছে ততদিনই জমা রাশির সুদ মিলবে। কিন্তু অ্যাকাউন্ট পরিণত হওযার পর আর কোনও সুদ পাওয়া যাবে না।

সুকন্যা সমৃ্দ্ধি অ্যাকাউন্ট সম্পর্কিত অধিক তথ্যঃ

এই অ্যাকাউন্ট নূন্যতম এক হাজার টাকা থেকে খোলা যেতে পারে। কন্যার শহর পরিবর্তিন হলে এই অ্যাকাউন্ট ভারতের যে কোনও শহরে স্থানান্তরিত করা সম্ভব। প্রতিবছর অন্তত এক হাজার টাকা প্রতি অ্যাকাউন্টে জমা করা বাধ্যতামূলক। একটি অ্যাকাউন্টে বছরে সর্বাধিক দেড় লক্ষ টাকা জমা করা যাবে। একটি আর্থিক বছরে যতবার খুশি টাকা জমা করা যেতে পারে। এর উপর কোনও বাধা নিষেধ নেই। অ্যাকাউন্টে নগদ, চেক, ড্রাফট অথবা অনলাইনের মাধ্যেমে টাকা জমা করা যেতে পারে। প্রতি বছর যদি অ্যাকাউন্টে নূন্যতম টাকা জমা না করা হয় তবে ৫০ টাকা জরিমানা করা হবে। প্রাথমিক পর্যায়ে এই যোজনায় বছরে সুদের পরিমান ছিল ৯.১ শতাংশ রাখা হয়েছিল। তবে বর্তমান ২০১৬-১৭ আর্থিক বছরে এই অ্যাকাউন্টে সুদের পরিমান ৮.১ শতাংশ। যদিও আগামী এপ্রিল মাসে ফের সুদের হারের সমীক্ষা করা হবে। যদি কোনও পরিবর্তন করা হয় তবে তা সঙ্গে সঙ্গে জানিয়ে দেওয়া হবে। সুদের গননা প্রতি বছর করা হবে এবং তা সরাসরি অ্যাকাউন্টে দিয়ে দেওয়া হবে। অভিভাবকেরা এই অ্যাকাউন্টের ১৪ বছর পর্যন্ত টাকা জমা করতে পারবেন। এরপরে অ্যাকাউন্ট পরিপূর্ণ হওয়া পর্যন্ত কোনও টাকা জমা করার প্রয়োজন নেই। কন্যার ১৮ বছর বয়স হওয়ার পর অ্যাকাউন্ট পরিণত না হলেও অ্যাকাউন্ট থেকে ৫০ শতাংশ ধার হিসেবে নেওয়া যেতে পারে। যদিও তা অবশ্যই ফেরতযোগ্য। কন্যার ২১ বছর বয়স হওয়ার পরই অ্যাকাউন্ট বন্ধ করা সম্ভব। যদি তার পরেও অ্যাকাউন্ট বন্ধ করা না হয় অথবা টাকা তোলা না হয় তাবে অ্যাকাউন্টে সুদ জমা বন্ধ হয়ে যাবে।

সিরিয়াল প্যারামিটার বিশদ বিবরণ
নাম সুকন্যা সমৃদ্ধি যোজনা
অ্যাকাউন্টের ধরণ ক্ষুদ্র সঞ্চয় প্রকল্প
প্রবর্তন তারিখ ২২ জানুয়ারি, ২০১৫
প্রবর্তন করেন প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরন্দ্র মোদী
লক্ষ্য শিশুকন্যার সুরক্ষা
শেষ তারিখ নেই
দেশ ভারত
বর্তমান সুদের হার ৮.১ %
বয়স সীমা ১০ বছর বা তার কম
১০ সঞ্চয় সীমা সর্বনিম্ন ১০০০ টাকা, সর্বোচ্চ ১.৫০ লক্ষ টাকা

সুকন্যা সমৃদ্ধি যোজনায় বিনিয়োগের কর উপকারিতাঃ

আয়কর অধিনিয়মের ধারা ৮০সি অনুযায়ী বছরে দেড় লক্ষ টাকা পর্যন্ত জমা করলে তাতে কর ছাড় মিলবে। এছাড়াও অ্যাকাউন্ট পরিপূর্ণ হওয়ার পর জমা রাশি তুলে নেওয়ার ক্ষেত্রেও করমুক্তি মিলবে। তবে বছরে অ্যাকাউন্টে দেড় লক্ষ টাকা বেশি জমা পড়লে তা আয়করের আওতায় পড়বে। বেতনভোগী ব্যক্তিদের জন্য আপনি তিন ধরণের আয়কর পরিষেবার সুবিধা নিতে পারেন। যেমন – অনলাইন আয়কর ই-ফাইলিং, এক্সপার্ট ট্যাক্স প্রিপারেশন সার্ভিস এবং ইন-পার্সন ট্যাক্স ই-ফাইলিং।

সুকন্যা সমৃদ্ধি অ্যাকাউন্টের সংখ্যার পরিসংখ্যানঃ

কেন্দ্র সরকারের সুকন্যা সমৃদ্ধি যোজনা চালু হওয়ার পর থেকে মাত্র দুমাসের মধ্যে মোট ১.৮০ লক্ষ অ্যাকাউন্ট চালু হয়েছে। এক্ষেত্রে সবার আগে নাম রয়েছে কর্ণাটকের এবং সবথেকে পিছিয়ে রয়েছ বিহার।

কেন্দ্রীয় সরকারের পরিসংখ্যান অনুযায়ী এখনও পর্যন্ত কর্ণাটকে ৫৬,৪৭১ টি অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে। তার পরেই নাম রয়েছে তামিলনাড়ুর। এই রাজ্যে ৪৩,৩৬২ টি অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে। এছাড়াও অন্ধ্রপ্রদেশে ১৫,৮৭৭ টি খোলা হয়েছে। অন্যদিকে দেশের রাজধানী দিল্লিতে ২,০৫৪ টি অ্যাকাউন্ট, হরিয়ানায় ৪১৭৭ টি অ্যাকাউন্ট, উত্তরপ্রদেশে ৭,৬২০ টি অ্যাকাউন্ট, কেরালায় ২২২ টি অ্যাকাউন্ট ও পশ্চিমবঙ্গে ৩৩৪ টি খোলা হয়েছে। বিহারে এই অ্যাকাউন্ট খোলার সংখ্যা সবচেয়ে কম। এই রাজ্যে মাত্র ২০৪ টি অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে।

Other Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *